বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: শুধু ভালো ছবি তুললেই হলো না , ছবি ভালো দেখতে হওয়াটাও জরুরী। ভিডিওগুলো বেশি রেজুলিউশনের হওয়া চাই, এরকম নানান ডিজিটাল যুগীয় চাহিদা এখন সব প্রজন্মের মানুষের মধ্যেই তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও ক্লিপ তৈরির প্রবণতা যেমন ব্যাপক হারে বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডি এস এল আর কামেরার চাহিদা।
তরুণতরুণীদের কাছে একটা ডি এস এল আর ক্যামেরা থাকা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকার মতই দরকারি হয়ে পড়ছে কারণ, সিনেমাটোগ্রাফির কাজ, ভ্লগ বা বিভিন্ন ভিডিও প্রোজেক্ট করার মাধ্যমে বাড়ছে উপার্জনের সুযোগ।
তবে, ডিএসএল আর কেনার সময় যে ৫টি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল করবেন-
১। ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী ক্যামেরা কেনার কথা ভাবুন
ক্যামেরায় কি ধরনের কাজ করতে চান সেটা মাথায় রেখে পছন্দের ক্যামেরার মডেল বাছুন। যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় ভিডিওগ্রাফি তবে রেজোলিউশান এবং ফ্রেমরেট স্পিড দেখে ডি এস এল আর কিনুন। ১০৮০পিক্সেল ছবি ৬০ ফ্রেম রেটে শ্যুট করা যাবে এমন ক্যামেরাই ভিডিওগ্রাফির পক্ষে সুবিধের হবে। যদি ভবিষ্যতের কথা ভেবে একবারেই ভাল বাজেটের ক্যামেরা কিনতে চান তবে অবশ্যই 4K রেজোলিউশানের ক্যামেরা কিনুন।
২। সেন্সর সাইজ কেমন তা দেখে নিন
সেন্সরের মাপ হল পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনটে জনপ্রিয় সেন্সর সাইজ ডি এস এল আর ক্যামেরায় থাকে। একটি হল ফুল ফ্রেম সেন্সর, যেটি ফোটোগ্রাফারদের জন্য। দ্বিতীয়টি হল এ পি এস- সি সেন্সর, যেটি ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফি উভয় কাজের পক্ষেই সুবিধেজনক । তৃতীয়টি ফোর থার্ড বা মাইক্রো ফোর থার্ড যেটি অলিম্পাস এবং প্যানাসনিক ক্যামেরায় থাকে যেটি ভিডিওগ্রাফারদের পক্ষে খুবই ভাল, কারণ এতে অধিক ফ্রেম রেট থাকায় খুব ভাল ছবি হয়।
৩। ক্যামেরার গঠনগত বৈশিষ্ট্য বা বডির বিষয়ে জানুন
আপাতভাবে সব ডি এস এল আর অনেকটা একইরকম দেখতে মনে হলেও তফাৎ থাকে গঠনে এবং উপাদানে। ক্যামেরা কেনার সময় দেখে নিন মাইক্রোফোন পোর্ট, এইচডিএমআই পোর্ট, এবং কাস্টম বাটন এর পরিমাণ ঠিকমত রয়েছে কিনা। দেখে নিন ডিসপ্লে কিরকম, প্রয়োজনমত অ্যাঙ্গেলে ফ্লিপ করা যায় কিনা এবং সম্ভব হলে টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে কিনুন। ভ্লগিং-এর জন্য যতটা সম্ভব হালকা ওজনের ছোট ক্যামেরা কিনুন। সনির আলফা সিরিসের মিররলেস ক্যামেরা ইউটিউব ভিডিও তৈরির জন্য আদর্শ হতে পারে, দামও বাজেটের মধ্যেই।
৪। প্রয়োজন মতো লেন্স পাওয়া যাবে কিনা দেখে নিন
ক্যামেরার ছবি ভাল হবার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান লেন্সেরই। ক্যামেরা কেনার সময় দেখে নিন আপনার পছন্দের মডেল কি কি লেন্স ধারণ করতে সক্ষম। আরও দেখে নিন সেই ব্র্যান্ড আপনাকে বাজেটের মধ্যে লেন্স দিচ্ছে কিনা। যেমন, নিকন, ক্যানন, সনি এই তিনটে ব্র্যান্ডই ভাল লেন্সের পরিসর দেয় কিন্তু এদের মধ্যে সনির লেন্স সবচেয়ে দামি এবং নিকনের সবচেয়ে সস্তা। আপনার বাজেট একটু বেশি থাকলে ক্যামেরা কেনার সময় বডির সঙ্গে ১৮-৫৫ মিলিমিটার কিটলেন্স না নিয়ে একটি ভাল জুম লেন্স ও একটি প্রাইম লেন্স নিয়ে নিতে পারেন যেটি বেশ কার্যক্ষেত্রে সুবিধে দেয়।
৫। বাজেট অনুযায়ী ক্যামেরা পছন্দ করুন
যদি আপনার বাজেট তিরিশ হাজারের মধ্যে তবে নিকন ডি ৫৩০০ কিনতে পারেন। এটি ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফি শুরু করার পক্ষে খুবই ভাল ক্যামেরা। পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজারের মধ্যে ভাল ক্যামেরা খুঁজলে নিকন ডি ৫৫০০ এবং বাজেট আশি থেকে নব্বই হাজারের মধ্যে হলে ক্যানন ৮০ ডি এবং সনি আলফা মিররলেস সিরিস দেখতে পারেন। লাখের ওপরে পেশাদারি ক্যামেরা পাবেন, যার শুরুতেই রয়েছে জনপ্রিয় ক্যামেরা ক্যানন ৬ ডি এবং তারপর আড়াই লাখে ক্যানন ৫ ডি মার্ক থ্রি। তবে পেশাদারি ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে আপনার বাজেট যদি এর অধিক হয় তবে ব্যবহারিক প্রয়োজন অনুযায়ী ভেবেচিন্তে কিনবেন।
আপনি যদি ২০২৩ সালে ডি এস এল আর কেনার পরিকল্পনায় থাকেন তবে অবশ্যই বিষয়গুলো বিবেচনা করে নিন। কাজ অনুযায়ী ক্যামেরা ও প্রয়োজনীয় লেন্সের দাম সম্পর্কে খোঁজ খবর করুন আগে। আমাজন, ইবে , ফ্লিপকারটের মতো সাইটগুলিতে বছরের শেষে ও শুরুতে এবং বছরের মাঝে নানান মরশুমে অনেক লোভনীয় অফার থাকে ইলেক্ট্রনিক্সে। সেখানেই যাচাই করে নিতে পারেন দাম। বাজার চলতি দামের চেয়ে অনেকসময়েই বেশ কমে ডি এস এল আর পেয়ে যাবেন অনলাইনে। ওপরে দেওয়া নির্দেশিকা অনুসরণে আপনার ডি এস এল আর কেনার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধে হতে পারে।