আব্দুস সামাদ আফিন্দী, জামালগঞ্জ সুনামগঞ্জে:
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার জলমহাল, বিল, ডোবা ও নদীর তলদেশ শুকিয়ে অবাধে মাছ ধরার মচ্ছব চলছে। অসাধু জলমহাল-বিল ব্যবসায়ী চক্রের নেতৃত্বে প্রতিবছরই চলে এমন উৎসব। মৎস্য বিভাগের নাকের ডগায় অবাধে জলমহালের তলদেশ শুকিয়ে মাছ নিধন করলেও নেওয়া হচ্ছে না পদক্ষেপ।
জলমহাল সেচের কারণে কৃষি জমিতে সেচ সঙ্কটসহ মাছের বংশ বিস্তার রোধ ও হাওরের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে আরো প্রবল করে তোলা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের লোকজনের সাথে গোপনে রফাদফা করে চক্রটি হাওর এলাকায় প্রতিবছরই এমন তৎপরতা চালিয়ে মাছের বংশ ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত অবাদে বীর দর্পে চলছে জলমহাল-খাল-বিল, ডোবার তলদেশ সেচের কাজ। জলমহাল-বিল ও নদীর তলদেশ শুকিয়ে মাছ শিকারের কোনো বৈধতা না থাকলেও জামালগঞ্জ উপজেলার পুরো হাওর এলাকায় ইজারার বেশিভাগ জলমহাল, খাল-বিল, জলাশয় শুকিয়ে মাছের প্রজনন ও বংশ বিস্তার রোধের পাশাপাশি জলমহালগুলোকে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
হাওর ঘুরে দেখা যায়, সোনাপুর গ্রামের সামনে নয়াখাল নাইমদা> বেহেলী ও বদরপুরের মাঝ অংশে কসমার বিল, তেরানগরের পাশে দৌলতা নদী, ছিছড়াবনি, লকড়ি> ঘনিয়ার বিলসহ অনেক জলমহালের তলদেশ সেচা হয়েছে। ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বিনাজুরা ও উদয়পুর গ্রামের মধ্যবর্তী লড়কি বিল, দিরাই চাতল বিল, ফেনারবাঁক ও রাজাপুর গ্রামের মাঝে ছিছড়াউলী বিল ও মুসলিম রাজাপুর গ্রামের পশ্চিম পাশে ধলাপাকনা বিল, খোঁজারগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী চন্দ্রঘোনা বিল, হটামারা গ্রাম-সংলগ্ন হকিয়াডুকি বিল, ভীমখালী ইউনিয়নের তেরানগর গ্রামের পাশে দৌলতা নদী, দেউতান বিল, লম্বা বিল-গোল বিল> ও বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর-সংলগ্ন ঘনিয়ার বিল, বেহেলী বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে কসমার বিল, সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের সামনে নয়াখাল নাইন্দা বিলসহ এমন অনেক বিলের দুই-তিনটি ছাড়া সবগুলোই বিলের তলা শুকিয়ে মাছ ধরা শেষ বলে জানায় স্থানীয়রা। আবার কোনোটিতে মেশিন লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। সঙ্ঘবদ্ধ মাছ শিকারি চক্র প্রায় সব বিলে অবৈধ পন্থায় জলমহালের তলা শুকিয়ে মাছ ধরা অব্যাহত রেখে মাছের বংশ ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
বিল শুকিয়ে মাছ ধরার বিষয়টি শিকার করে স্থানীয় এক সমিতির সভাপতি বলেন,কাগজেপত্রে ইজারাকৃত বিলের মালিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। তবে আমরা নামে আছি, কামে নেই। আমরা এর সাথে জড়িত নই। যারা সাবলিজ নেয়, তারাই প্রতিবছরই এমন আকাম করে যা নিয়মের বর্হিভূত।সদর ইউনিয়নের সোনাপুর-লালপুর এলকার কৃষক সুবেন্দু দে বলেন, ‘নাইমদা বিল সেচার কারণে আমরা বোরো জমিতে পানি দিতে পারিনি, ধান কম হবে, আমার হাওরে দেড়শ গরু আছে, গরুর পানি খাওয়ার জায়গা ছিল নাইমদা বিল, সেচ করার কারণে আমরার গরুগুলো পানি খেতে পারে না।’
জামালগঞ্জ প্রেসক্লাব সেক্রেটারি সিনিয়র সংবাদকর্মী বাদল কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনেই এমন অনেক জলমহাল, খাল-বিল শুকিয়ে মাছ ধরছে> বরাবরই এরকম বিলের তলা শুকিয়ে মাছ ধরা হয়> এবারো হচ্ছে, কৃষকরা আমাদের জানানোর পর আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে টালবাহানা করেন> এরই মধ্যে বিল সেচে মাছ ধরার কাজ শেষ করে তারা।’জামালগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা [ অ: দা:] কামরুল হাসানের কার্যালয়ে পর-পর কয়েক দিন বক্তব্য নিতে গেলে তিনি একটু পরে, বিকেলে> সন্ধ্যায় বক্তব্য দেবেন বলে কয়েক দিন সময় পার করেন। কোনো কোনো দিন তার কার্যালয় বন্ধ এবং খোলা অবস্থায়ও পাওয়া যায়নি তাকে।মোবাইল ফোনে তিনি জলমহাল সেচ বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান>সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: শামশুল করিম মোবাইল ফোনে বলেন, হাওরের বিল-ডোবা অথবা জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা আইনে নেই। জেলার সকল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের বলা আছে। স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, এবং মৎস্য কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করেন। তারাই এ সব বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন।