• ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতা নজির হোসেন আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক এ এম সারওয়ার জাহান / ২৭ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক এ এম সারওয়ার জাহান /

বাংলাদেশের অন্যতম এক বর্ষীয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা  সুনামগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের গণমানুষের প্রিয় মুখ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য জনাব  নজির হোসেন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেলেন
 বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৪.২০ মিনিটে তিনি ঢাকার উত্তরার নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন [ইন্না—লিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন ]। মৃত্যুকালে স্ত্রী ছেলেসহ অসংখ্য স্বজন শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় পৌর শহরের পুরাতন বাসস্টেশনে মরহুম নজির হোসেনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে নজির হোসেনকে শেষ বিদায় জানাতে বিএনপি—আওয়ামী লীগ সহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে পুরাতন বাস স্টেশনে। সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানানো হয় নজির হোসেনকে। জানাজার আগে সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসির নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানায় একদল চৌকস পুলিশ সদস্য। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়াত এই জননেতার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।বাংলাদেশের অন্যতম এক বর্ষীয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ,সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত,  জেলা বিএনপি’র সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, , জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান পলিন বখত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল, শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ফারুক আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী,  জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী, পিপি অ্যাড. খায়রুল কবির রুমেন,  জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আইনুল ইসলাম বাবলু, অ্যাড. সালেহ আহমদ, অ্যাড. রুহুল তুহিন, জেলা বিএনপির সভাপতি নাদীর আহমদ,    বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শেরেনুর আলী, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী সহ বীর মুক্তিযুদ্ধাবৃন্দ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জানাযায় অংশ নেন। সেখানে জানাজা শেষে বিকেলে  বীর মুক্তিযোদ্ধা নজির হোসেনের মরদেহ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর  গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় ,সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।

নজির হোসেন ১৯৪৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে আব্দুল গণী ও ছুরত উন নিসা ঔরসে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. আব্দুল গণী ও মাতার নাম ছুরত উন নিসা। এটি ঐতিহাসিক লাউর রাজ্যে কাগজী পরিবার নামে খ্যাত এক সম্ভ্রান্ত বংশ। পঞ্চাশ দশক পর্যন্ত পরিবারটি তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। বাবা ছিলেন একজন ধার্মিক মৌলানা এবং ছোট পল্লী চিকিৎসক। শিশুকাল থেকেই নজির হোসেন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কলারশিপ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বৃত্তি পান,
দারিদ্রের কারণে সেই বাল্যকাল থেকেই টিউশনি করে পড়াশুনা চালিয়ে যান। অষ্টম শ্রেণি পাশের পর বাবা আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে পড়াশুনা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মা ছেলের পড়াশুনার পক্ষে ছিলেন। মা সুয়েতুন নেছা’র কাছ থেকে চার আনা পয়সা চেয়ে নিয়ে সেই ১৯৫৭ সালে ভাগ্য এবং নিজের দৃঢ় মনোবলের উপর নির্ভর করে বাড়ি থেকে অজানার পথে বেরিয়ে পড়েন। পরবর্তিতে নজির হোসেন ১৯৬৩ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি পাশ করেন। সে সময়ে প্রথম বিভাগ একমাত্র অনন্য মেধাবী ও চরম অধ্যবসায়ী ছাত্রেরাই পেতেন। এরপর সিলেট এম.সি কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচ.এস.সি এবং বি.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এস.সি (গণিত) তে ভর্তি হন। সেদিনের সেই তুখোড় মেধাবী ছাত্র ফিরে আসেন সংগ্রামী জননেতা হিসেবে। বড় চাকরী করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নের চেয়ে সমাজ বদলের রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরেন।

সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই কৃতি সন্তান নজির হোসেন ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৬৫ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন

তিনি ১৯৬৬ সালে জেলা সিলেট ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে সিলেট জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এবছরই শেষের দিকে সুনামগঞ্জ জেলা সিপিবির দায়িত্ব লাভ করে দলকে সংগঠিত করতে চলে আসেন সুনামগঞ্জে। সুনামগঞ্জ মহকুমার গোপন কমিউনিস্ট সেলের প্রধান ছিলেন নজির হোসেন। কমিনিষ্ট পার্টি ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) ও কৃষক সমিতি পরিচালনা করতেন।

নজির হোসেন ১৯৭১ সালে সুনামগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সহসম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জুনের প্রথম দিকে শিলংয়ের সানী হোটেলে কমরেড বরুণ রায়, পীর হাবিবুর রহমান, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও সরদার লতিফের উপস্থিতিতে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্তের আলোকে টেকেরঘাট সাব সেক্টর একটি গেরিলা যুদ্ধের জোন হিসেবে গড়ে ওঠে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত সেক্টর কমাণ্ডার ও নজির হোসেন টেকেরঘাট সাব সেক্টরের সহ—অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সুনামগঞ্জ মহকুমা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে ১৮ মাসব্যাপী রাজনৈতিক পড়াশুনার জন্যে মস্কোতে ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪ বছর আত্মগোপনে ছিলেন এবং মুস্তাক সরকার বিরোধী সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের স্বার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৫ সালে নিরাপত্তা আইনে ৬ মাস কারাবরণ করেন।

সুনামগঞ্জের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নজির হোসেন ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভাসান পানির আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন, তবে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কখনো    পিচপা হননি, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিপিবি থেকে ৮ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হয়ে নজির হোসেন প্রথম  সংসদ সদস্য  নির্বাচিত হন।

 

পঞ্চম সংসদে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন নজির হোসেন, আশির দশকের সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্লাসনষ্ট, পেরেস্ত্রাইকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনেও এর প্রভাব পড়ে, নব্বই দশকের প্রথম দিকে সিপিবি ভাঙ্গতে শুরু করলে মূলদল থেকে গণফোরাম, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দলে সিপিবি’র নেতাকর্মীরা যোগ দিতে শুরু করেন, তখন নজির হোসেন ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর বিএনপিতে যোগ দেন।,তিনি প্রথমে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন, ১০ বছর সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ৫ বছর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন, আমৃত্যু সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য ছিলেন।

 প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সুনামগঞ্জ জেলা শহরে 

জীবন সংগ্রামের কঠিন বাস্তবতাকে আলিঙ্গন করে যার পথচলা শুরু, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলাকেই যিনি জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এবং তাতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিকূলতাকে জয় করেই সফল হয়েছেন  বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতা নজির হোসেন, জন্মগত ভাবেই যার মেধার কোন কমতি ছিলো না কোন ক্ষেত্রেই, সুনামগঞ্জ জেলায় বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেক নেতাই রাজনীতি শিখেছেন  বর্ষীয়ান এই নেতার কাছ থেকে ,

রাষ্ট্রনীতির, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অগ্রগতি, শিক্ষার প্রসার, ব্যবসা বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই তার বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা তার রাজনৈতিক সাথীদের সাথে ব্যাখ্যা করতেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে, উনার আলোচনায় সব সময়ই নতুন নতুন আইডিয়া তিনি তুলে ধরতেন যা একজন আদর্শিক প্রশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এক মূল্যবান উপাদান হিসেবে প্রকাশ পেতো, 

সুনামগঞ্জ জেলার ভাটি অঞ্চলের প্রিয় মুখ বর্ষিয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তি  বীর মুক্তিযোদ্ধা  নজির হোসেন সুনামগঞ্জ  জেলার ১ আসনের নির্বাচনী এলাকা /  ধর্মপাশা ও মধ্যনগর  /তাহিরপুর, জামালগঞ্জ / আসন থেকে ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, এরপর ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল [ বিএনপিতে ]যোগদান করেন, ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো বিএনপি থেকে একই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান এই নেতা,

সুনামগঞ্জ জেলার ১ আসনের/  ধর্মপাশা ও মধ্যনগর  /তাহিরপুর, জামালগঞ্জ /  নির্বাচনী এলাকার অর্থনৈতিক জীবনমানের উন্নয়নের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন প্রতিটা মানুষের হৃদয়ে ,


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

April 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  

No video found!